কিছু বাগানে তীব্র তাপদাহে ঝরে পরছে লিচু।
ফলের রাজ্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া আর লিচুর রাজধানী বলা হয় বিজয়নগরকে প্রায় ৫০ বছর আগে থেকে এই উপজেলায় লিচু আবাদ শুরু হয়। জায়গা ও শ্রম কম হওয়ার কারণে লিচু ব্যবসা শুরু করেন স্থানীয় কৃষকরা।
প্রতিবারের মত এবারও লিচু গাছে সবুজ গুটি আর মৌ মৌ গন্ধ। এই সময়ে লিচুর গাছে গাছে সবুজ পাতা, ফলের সমারোহ। প্রায় সব গাছেই ফলন এসে গেছে। এরই মধ্যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবারেও লিচুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।তবে তাপদাহের প্রভাবে কিছু কিছু বাগানে লিচু ঝরে পরছে।ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লিচু যায় সারাদেশের কুমিল্লা, নরসিংদী, ভৈরব, নোয়াখালী, চাঁদপুর, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, শায়েস্তাগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, ফেনী ও রাজধানী ঢাকার ব্যবসায়ীরা পায়কারি দরে লিচু কিনে নিয়ে যান।লিচুর বাজার হিসাবে জেলার সবচেয়ে বড় বাজার হিসেবে পরিচিত বিজয়নগরের আউলিয়া বাজার।তিন উপজেলার লিচু জমায়েত হয়ে যেখানে ভোর ৩ টা থেকে সকাল ৬ টা পর্যন্ত লিচু বেচা-কেনা হয় কোটি টাকার।
বিজয়নগরের লিচু মানে অন্যরকম মিষ্টি ও রসালো স্বাদ আর বৈশিষ্ট নিয়ে বিভিন্ন জাতের লিচুর মধ্যে বেদানা, বোম্বাই, মাদ্রাজি, চায়না-থ্রি আর দেশি লিচু গুটি ফলনে নুয়ে পড়েছে এখন গাছের ডালপালা। লিচুর বাগানে দেখা যায়, পোকা-মাকড়ের আক্রোমণ ও রোগ বালাই থেকে মুক্ত করতে চাষিরা লিচু গাছে বালইনাষক ছিটাচ্ছেন। অনেকে লিচু গাছের আগাছা মুক্ত করছেন।গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন বাগান মালিকরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্তবর্তী তিন উপজেলা বিজয়নগর, আখাউড়া, কসবার মাটি লিচু উৎপাদনের উপযোগী হওয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে লিচুর আবাদ।
স্বাদে ও গুণে অনন্য হওয়ায় এখানকার লিচুর কদর রয়েছে দেশজুড়ে। তবে প্রচণ্ড গরমে লিচু ফেটে যাওয়া ও আকারে কিছুটা ছোট হওয়া ও ঝরে পড়ার সম্ভাবনা থাকে প্রতিবারই। তীব্র তাপদাহ থেকে রক্ষা পেতে চাষিদের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে কৃষি বিভাগ থেকে। বিভিন্ন বাগান ঘুরে দেখা যায়, গাছে থোকায় থোকায় শোভা পাচ্ছে বোম্বাই, পাটনা ও চায়নাসহ বিভিন্ন জাতের লিচুর গুটি। কিছু কিছু গাছে ঝুলে থাকা সবুজ রঙা লিচুর গুটি ঝুলে আছে দোল খাচ্ছে বাতাসে।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলার ৫৬৮ হেক্টর জমিতে বোম্বাই, পাটনা ও চায়না জাতের লিচুর আবাদ করা হয়েছে। এ বছর ৫৬৮ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩ হাজার মেট্রিকটন লিচুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে যার বিক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ২৫ কোটি টাকা।
জেলার সীমান্তবর্তী বিজয়নগর, কসবা এবং আখাউড়া উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১২ শত লিচু বাগান রয়েছে। এর মধ্যে বিজয়নগরের সিঙ্গারবিল, বিষ্ণুপুর ও পাহাড়পুর ইউনিয়নে বাগানের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।ব্রাহ্মণবাড়িয়া বার্তা।
বিজয়নগরে একজন বাগান মালিক শাহীন মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া বার্তাকে বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। আমার বাগানে প্রায় ৩০০ শ লিচু গাছ রয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে ২০ লক্ষ টাকার লিচু বিক্রি করতে পারবো ইনশাল্লাহ। তিনি আরো বলেন,বিজয়নগরে যেহেতু লিচু চাষের উপযোগী কৃষি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি এ এলাকায় একটি লিচু গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে লিচুর ফলনসহ আরও উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
বিজয়নগর, আখাউড়া কসবা উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার হরষপুর, চম্পকনগর, বিষ্ণুপুর, পাহাড়পুরসহ আরো কয়েকটি ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি লিচুর বাগান ও ফলন হয়েছে। আখাউড়ার উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়নের ধর্মনগর, কর্মমঠ, রাজমঙ্গলপুর, নোয়ামুড়া, ঘাগুটিয়া, শিবনগর,খারকোট,কসবার,গোপিনাথপুর,জগনাথপুরসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুশান্ত সাহা ব্রাহ্মণবাড়িয়া বার্তাকে জানান, উপজেলার সব বাগানে কৃষি কর্মকর্তারা তদারকিতে সক্রিয় রয়েছেন।যে সকল এলাকাতে তীব্র তাপদাহ এবং বৃষ্টি হয়নি সে সকল এলাকার লিচু বাগান মালিকদের ও কৃষকদের সেচের পানি ও অন্যান্য পরামর্শ দিচ্ছে।অন্যান্য বছরের মতো এবারও লিচুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন তিনি।
ব্রাহ্মণ/বার্তা২৫