ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গত ১০ বছর ধরে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছেন কৃষকরা। এ বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ১০০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও প্রতিকূল আবাহাওয়ার কারণে ৫৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে। যা থেকে ৯৭ মেট্রিক টন তেল উৎপাদন করা হবে। এদিকে কৃষকেরা বলছেন অল্প পুঁজিতে সূর্যমুখী চাষে অধিক লাভের স্বপ্ন দেখছেন তারা। কৃষি বিভাগ বলছে আগামী দিনে ভাল ফলনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়,সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউপির খেওয়াই গ্রাম, রামরাইল ইউপির মোহাম্মদপুর গ্রাম, ও পৌর এলাকার ভাদুঘর, নবীনগর উপজেলার নাটঘর ইউপির রসুলপুর গ্রামে সূর্যমুখী ফুলের বাগান। চাষীরা জানিয়েছেন জেলার বিভিন্ন গ্রামের জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করা হয়েছে।
ইতিমধ্যেই গাছে ফুল ধরেতে শুরু করেছে। চারিদিকে হলুদ রঙের ফুলের মন মাতানো ঘ্রান, হলুদের সমাহার। প্রতিটি বাগানেই মৌমাছির দল গুনগুন শব্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মৌমাছিরা সূর্যমুখী ফুল থেকে মধু নেওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত। গ্রামে সূর্যের মত হাঁসি দেয়া হলুদ গালিচা ছড়ানো ফুলের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে প্রতিদিন বাগানে আসছেন ভ্রমন পিপাসু নারী-পুরুষ সহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ। প্রতিদিন সকাল-বিকেলে শহরসহ আশপাশ এলাকা থেকে সৌন্দর্য পিয়াসুরা দল বেঁধে আসেন এই সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে। অনেকেই বাগানে ঢুকে শখ করে ছবি তুলেন। কেউ সেলফি ব্যস্ত কেউবা পরিবারের ছবি তোলতে ব্যস্ত কেউ ঘুরে ঘুরে বাগান দেখছেন। এ যেন এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।
রসূলপুর সূর্যমুখী বাগানে ঘুরতে আসা জেলা শহরের কান্দিপাড়া এলাকার রজন আলী বলেন, এখানে আসার পর দেখলাম জায়গাটি খুব সুন্দর। সূর্যমুখী বাগানে প্রথমবারের মত আসলাম পরিবার নিয়ে। আমরা খুব সুন্দর ভাবে উপভোগ করতে পারছি। সূর্যমুখী ফুল দেখেও খুব ভাল লাগলো।
রসূলপুর বাগান মালিক জয়নাল আবেদিন জানান, এখানে ৩ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি। তিন বিঘা জমি চাষে আমাদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সে ফুল এখন গাছে আছে তা দিয়ে আশা করছি লাভবান হতে পারবো। তিনি আরো জানান, এক বিঘা (৩০ শতাংশ) জমিতে সরিষা চাষ করতে যেমন তেল হয়, সূর্যমুখীতে ও তাই হবে। তেল বিক্রি করে লাভবান হলে আগামীতে আরো বাড়িয়ে জমিতে সূর্যমুখী চাষাবাদ করা হবে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মুনসী তোফায়েল হোসেন জানান, সূর্যমুখী চাষ জমির উর্বরতার জন্য ভাল। এতে পোকামাকড় আক্রমন করে কম। বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক চাষাবাদ হলে পর্যটকদের তৎপড়তা কমে আসবে। সূর্যমুখী চাষে কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষকদেরকে বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে আগামী দিনে উন্নত জাতের সূর্যমুখী চাষাবাদের পরিকল্পনার কথা জানান কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা। তিনি আরো জানান, চলতি বছর ১০০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও প্রতিকূল আবাহাওয়ার কারণে ৫৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে।