ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। আপডেট নিউজ থিমটি ক্রয় করতে আমাদের কল করুন 01732667364। আমাদের আরো নিউজ থিম দেখতে ভিজিট করুন www.themesbazar.com

আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে আসা কেমিক্যাল মিশ্রিত বিষাক্ত পানি: ঝুঁকিতে জনস্বাস্থ্য।

Oplus_131072

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্তের জাজিনদী, কালন্দি খাল ও মরানদী দিয়ে ভারতের ত্রিপুরার আগরতলা থেকে আসছে কেমিক্যাল ও দুর্গন্ধযুক্ত বিষাক্ত কালো পানি। যুগের পর যুগ এ কালো পানিতে ভেসে আসছে নানান ধরনের বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ।এতে স্থানীয় বাসিন্দারা রয়েছেন যেমন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জীব বৈচিত্র্য। বারবার অভিযোগের পরও মেলেনি কোনো প্রতিকার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগরতলা শহরে ভূগর্ভস্থ কোনো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই। সেখানকার হাসপাতাল, শিল্পকারখানা, গৃহস্থালির বর্জ্য, নর্দমা ও শহরের স্যুয়ারেজ লাইনের দূষিত ময়লা আখাউড়া সীমান্তের ওই তিনটি খাল দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে। খালগুলোর পানিতে সিসা, সালফার, দস্তা, ক্রোমিয়াম, ম্যাংগানিজ, ক্যাডমিয়াম ও আয়রনের মতো ভারি রাসায়নিক পদার্থের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে,এতে দূষণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে আখাউড়া স্থলবন্দর সংলগ্ন গ্রামের বাসিন্দারা। বিষাক্ত কালো পানিতে বাড়ছে চর্মরোগ, নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমির উর্বরতা। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করেও মেলেনি প্রতিকার।

সরেজমিন দেখা যায়, আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট হয়ে যাতায়াতকারী যাত্রী, পর্যটক, বন্দর ও কাস্টমসে কর্মরতদের পানির উৎকট দুর্গন্ধ সহ্য করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কালন্দি খালে ও বাউতলার মরা নদী দিয়ে ভেসে আসছে দূষিত বর্জ্য। সীমান্তবর্তী কালিকাপুর গ্রামের জাজি নদী দিয়েও আসছে এ দূষিত পানি। যা মোগড়া ইউনিয়নের সেনারবাদী এবং আখাউড়া পৌর এলাকা হয়ে তিতাস নদীতে গিয়ে মিশছে।এ খাল থেকে মশা, মাছি এবং অন্যান্য বিষাক্ত পোকামাকড়ের প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, এক সময় মিঠা পানির অন্যতম উৎস ছিল এই খালের পানি। অথচ এখন আমরা এই খালকে ‘কালন্দি’ (কালো পানির খাল) নামে ডাকি। যুগ যুগ ধরে আমরা ভুক্তভোগীরা পানি পরিশোধণের দাবি জানিয়ে আসছি। যদিও দূষিত পানি পরিদর্শন ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ এবং পর্যবেক্ষণ করেছে যৌথ নদী কমিশন। তারা পানি পরীক্ষা ও নমুনা সংগ্রহ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকছেন। কাজের কাজ বাস্তবায়ন কিছুই হয়নি। নানান ধরনের রোগে ভোগতেছি আমরা।

এদিকে বিষাক্ত এ পানি বাংলাদেশে প্রবেশের আগে পরিশোধন করতে ইফলুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) স্থাপনের আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত কিছুই করেনি ত্রিপুরা রাজ্য সরকার। প্রায় ১০ বছর আগে ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি আখাউড়া স্থলবন্দরের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে দাঁড়িয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পানীয় জল ও স্বাস্থ্যবিধি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী রাম কৃপাল যাদব ইটিপি স্থাপনের আশ্বাস দিয়েছিলেন। তা আর বাস্তবয়ান হয়নি।

আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছাম্মদ তানিয়া তাবাসসুম জানান, এই পানি মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, ঢাকা থেকে পরীক্ষা করে পানির সঙ্গে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ পাওয়া গেছে। পানির মান ভালো না হলেও একমাত্র প্রয়োজনের তাগিদে স্থানীয় কৃষকরা ব্যবহার করে থাকেন। কৃষি বিভাগের লোকজন প্রায়ই মাঠ দিবসের মিটিংয়ে এ পানি ব্যবহার না করতে কৃষকদের অনুরোধ করেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হিমেল খান জানান, দূষিত পানির প্রভাবে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও অ্যালার্জি রোগ হতে পারে। এ পানির মাছ খাওয়াও মানবদেহের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে আসা কেমিক্যাল মিশ্রিত বিষাক্ত পানি: ঝুঁকিতে জনস্বাস্থ্য।

আপডেট সময় ০৮:৫৬:৪৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্তের জাজিনদী, কালন্দি খাল ও মরানদী দিয়ে ভারতের ত্রিপুরার আগরতলা থেকে আসছে কেমিক্যাল ও দুর্গন্ধযুক্ত বিষাক্ত কালো পানি। যুগের পর যুগ এ কালো পানিতে ভেসে আসছে নানান ধরনের বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ।এতে স্থানীয় বাসিন্দারা রয়েছেন যেমন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জীব বৈচিত্র্য। বারবার অভিযোগের পরও মেলেনি কোনো প্রতিকার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগরতলা শহরে ভূগর্ভস্থ কোনো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই। সেখানকার হাসপাতাল, শিল্পকারখানা, গৃহস্থালির বর্জ্য, নর্দমা ও শহরের স্যুয়ারেজ লাইনের দূষিত ময়লা আখাউড়া সীমান্তের ওই তিনটি খাল দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে। খালগুলোর পানিতে সিসা, সালফার, দস্তা, ক্রোমিয়াম, ম্যাংগানিজ, ক্যাডমিয়াম ও আয়রনের মতো ভারি রাসায়নিক পদার্থের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে,এতে দূষণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে আখাউড়া স্থলবন্দর সংলগ্ন গ্রামের বাসিন্দারা। বিষাক্ত কালো পানিতে বাড়ছে চর্মরোগ, নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমির উর্বরতা। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করেও মেলেনি প্রতিকার।

সরেজমিন দেখা যায়, আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট হয়ে যাতায়াতকারী যাত্রী, পর্যটক, বন্দর ও কাস্টমসে কর্মরতদের পানির উৎকট দুর্গন্ধ সহ্য করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কালন্দি খালে ও বাউতলার মরা নদী দিয়ে ভেসে আসছে দূষিত বর্জ্য। সীমান্তবর্তী কালিকাপুর গ্রামের জাজি নদী দিয়েও আসছে এ দূষিত পানি। যা মোগড়া ইউনিয়নের সেনারবাদী এবং আখাউড়া পৌর এলাকা হয়ে তিতাস নদীতে গিয়ে মিশছে।এ খাল থেকে মশা, মাছি এবং অন্যান্য বিষাক্ত পোকামাকড়ের প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, এক সময় মিঠা পানির অন্যতম উৎস ছিল এই খালের পানি। অথচ এখন আমরা এই খালকে ‘কালন্দি’ (কালো পানির খাল) নামে ডাকি। যুগ যুগ ধরে আমরা ভুক্তভোগীরা পানি পরিশোধণের দাবি জানিয়ে আসছি। যদিও দূষিত পানি পরিদর্শন ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ এবং পর্যবেক্ষণ করেছে যৌথ নদী কমিশন। তারা পানি পরীক্ষা ও নমুনা সংগ্রহ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকছেন। কাজের কাজ বাস্তবায়ন কিছুই হয়নি। নানান ধরনের রোগে ভোগতেছি আমরা।

এদিকে বিষাক্ত এ পানি বাংলাদেশে প্রবেশের আগে পরিশোধন করতে ইফলুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) স্থাপনের আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত কিছুই করেনি ত্রিপুরা রাজ্য সরকার। প্রায় ১০ বছর আগে ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি আখাউড়া স্থলবন্দরের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে দাঁড়িয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পানীয় জল ও স্বাস্থ্যবিধি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী রাম কৃপাল যাদব ইটিপি স্থাপনের আশ্বাস দিয়েছিলেন। তা আর বাস্তবয়ান হয়নি।

আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছাম্মদ তানিয়া তাবাসসুম জানান, এই পানি মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, ঢাকা থেকে পরীক্ষা করে পানির সঙ্গে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ পাওয়া গেছে। পানির মান ভালো না হলেও একমাত্র প্রয়োজনের তাগিদে স্থানীয় কৃষকরা ব্যবহার করে থাকেন। কৃষি বিভাগের লোকজন প্রায়ই মাঠ দিবসের মিটিংয়ে এ পানি ব্যবহার না করতে কৃষকদের অনুরোধ করেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হিমেল খান জানান, দূষিত পানির প্রভাবে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও অ্যালার্জি রোগ হতে পারে। এ পানির মাছ খাওয়াও মানবদেহের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।