
মুন্সি সাব্বির আহাম্মদ: ডিজিটাল যুগের একি অবস্থা ! প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা এখনই প্রয়োজন। অন্যথায় সবাইকে এর ভয়াবহ পরিণাম অচিরেই ভোগ করতে হবে । আজ যে সন্তান গুলো মায়ের কোলে বসে প্রাথমিক শিক্ষা নেয়ার কথা ছিল, তারা আজ প্রযুক্তির দুনিয়াতে হারিয়ে যাচ্ছে কিছু বুঝে ওঠার আগেই। এসব ছেলেমেয়ে কে পরবর্তীতে চাইলও আর এ জগৎ থেকে আলাদা করা যাবে না। যেখানে মনস্তাত্তিক ডাক্তার গণ শিশুদের সামনে মোবাইল ফোন সহ যাবতীয় ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী রাখার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিচ্ছেন, সেখানে বাবা মা শিশুকে খেলাধুলা, কার্টুন দেখা, ভাত খাওয়া, পড়া লেখা সহ যাবতীয় বিষয়ে তাদের কাছে মোবাইল ফোন/ ট্যাব ইত্যাদির মাধ্যমে সন্তানদের খুশি রাখার চেষ্টা করছেন। মনে রাখবেন এভাবে আপনার সন্তানের আজকের খুশি…. তার সারা জীবনের কান্নার কারণ হতে পারে।
ক্রমশ মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারে আসক্তি বাড়ছে শিশুদের। শহুরে শিশুদের স্মার্ট ফোন ব্যবহারের হার আরো বেশী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত ফোন ব্যবহারের ফলে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে শিশুদের মানসিক বিকাশ। চিকিৎকরা বলছেন, মোবাইল ফোনের বিকিরণ থেকে মায়োপিয়াসহ চোখের নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।
তথ্যপ্রযুক্তির এ সময়ে স্মার্টফোন নিত্যপ্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনা মহামারির লকডাউনের সময়ে এর ব্যবহার বেড়েছে বহুগুণ। প্রায়ই দেখা যায়, অভিভাবকরা বাচ্চাকে শান্ত রাখার জন্য তার হাতে স্মার্টফোন বা ট্যাব দেন। গান, কার্টুন বা মজার ভিডিও চালিয়ে দিয়ে তাকে শান্ত রাখা হয়।
এখন শিশুরা সাধারণত মোবাইল, টেলিভিশন, স্মার্টফোন, ট্যাব ও ইউটিউবে সময় বেশি সময় কাটায়। কিন্তু এ প্রযুক্তির কারণে শিশুদের মধ্যে নানাবিধ বিরূপ মনোভাব তৈরি হচ্ছে, এমনকি অতি অল্প বয়সেই তারা অ্যাডাল্ট বিভিন্ন কনটেন্ট দ্বারা উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। এভাবেই শিশুগুলো মোবাইলে অ্যাপসগুলোর সঙ্গে পরিচিত হয়ে যাচ্ছে এবং বিপজ্জনক সাইটেও ঢুকে পড়ছে।
এ সময়ের শিশুরা কেন স্মার্টফোন বা ট্যাবে এত বেশি আকৃষ্ট- এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, শহরের অধিকাংশ পরিবারে মা-বাবা দু’জনই চাকরিজীবী। কর্মব্যস্ততার কারণে সন্তানদের পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন না। ফলে শিশুরা মা-বাবার আদর-যত্ন থেকে অনেকাংশে বঞ্চিত হন। আর সেজন্যই বাচ্চাদের অবসর সময় কাটানোর জন্য ফোন, ট্যাব কিংবা ল্যাপটপ দিচ্ছেন। ফলে শিশুরা সহজেই এসবে আসক্ত হচ্ছে।
অনেক অভিভাবকরা কেউ হয়তো কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত। পাশে বসে ছোট বাচ্চাটি দুষ্টুমি করছে। শান্ত রাখার জন্য তার হাতে স্মার্টফোন বা ট্যাব ধরিয়ে দিলেন। গান, কার্টুন বা মজার ভিডিও ছেড়ে দিয়ে তাকে নিমিষেই শান্ত করে ফেললেন। এভাবেই শিশুরা আসক্ত হচ্ছে ডিজিটাল এ বক্সে। অভিভাবকদের এমন সামান্য ভুলে শিশুর বড় ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।
একটু বড় হলে এ শিশুদের বেশিরভাগই মানুষের সঙ্গে মিশতে চাইবে না। বাইরে খেলাধুলার বদলে ঘরে বসে ভিডিও গেম খেলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে। আস্তে আস্তে একাকিত্ব পেয়ে বসবে তাদের।
আড়াই বছরের বাচ্চাকে খাওয়াতে বসতে মায়ের কেটে যায় ঘণ্টা তিনেক সময়। কিছুই মুখে তুলতে চায় না সে। একমাত্র উপায়, মোবাইল ফোনে কার্টুনের ভিডিও চালিয়ে তার হাতে তুলে দেওয়া। তা হলে কপকপ খেয়ে নেয় ছেলে। এ ভাবে কিছু দিন চলার পরে মায়ের মোবাইল হঠাৎ খারাপ। দোকানে বলেছে, তিন দিন লাগবে সারাতে। ব্যস, মাথায় হাত মায়ের। এই তিন দিন ছেলেটা কিছু মুখে তুললে হয়!
তিন দিন পরে যা হোক, মোবাইল ফিরল। সে ক’টি দিন খাওয়া নিয়ে অতটুকু ছেলের সঙ্গে যুদ্ধ চলল মায়ের। মোবাইল ফিরলে মায়ের স্বস্তিও ফিরল।
কিন্তু কয়েক মাসের মাথায় অন্য সমস্যা। শিশুটির চোখ দিয়ে খামোখা জল পড়তে শুরু করে। চিকিৎসক ওষুধপত্র দেওয়ার পরে বলেছেন, সন্তানের হাতে যেন মোবাইল কোনও ভাবেই দেওয়া না হয়। ছেলের বাবার কথায়, ‘‘কান্নাকাটি করলেও এখন ওর হাতে মোবাইল দিই না। খাওয়ানোর সময়ে ওর মাকে বলেছি, বই পড়ে শোনাবে।’’
সয়ং মোবাইল ফোন কোম্পানির মালিক ও মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস শিশুদের হাতে মোবাইল ফোন দিতে নিষেধ করেছেন।কারণ শিশুরা একবার মোবাইল ফোনে আসক্ত হলে এর থেকে তাদের বের করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে। বিশেষজ্ঞরা অভিবাবকদের বাচ্চাদের শান্ত রাখতে নিজেদের গান শোনানো , গল্প বলা , ছবি আঁকার কথা বলছেন । শিশুদেরকে হাসি খুশিতে রাখার একমাত্র উপায় মোবাইল নয় । এতে বাবামায়ের ধৈর্য লাগবে, সময় লাগবে তবুও আপনার সন্তান ভাল থাকবে। এটা মনে করা যাবে না যে শিশুদের মন রক্ষা করতে হাতের কাছে পড়ে আছে সব রোগের একমাত্র ওষুধ মোবাইল! শুধুমাত্র পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতায় পারে (ডিজিটাল দানব) থেকে আমাদের আগামীর ভবিষ্যত অর্থাৎ শিশুদের রক্ষা করতে।
আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ । আর এই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাচাঁতে হলে এখনই সকল অভিবাবককে সচেতন হতে হবে।
জীবন চলার পথে প্রায়ই আমাদের সামনে ঘটে যায় বিভিন্ন ধরণের অনাকাংক্ষিত ঘটনা, আমরা চাইলে প্রযুক্তির কল্যানে খুব সহজেই ঘটনাগুলোকে ক্যামেরা বন্দি বা ভিডিও রেকর্ড করে ফেলতে পারি এবং খুব দ্রুত অন্যদের কাছে সেই ঘটনার খবর ছড়িয়ে দিতে পারি।
ভাইরাল২৪.কম এমন একটি ওপেন নিইজ প্ল্যাটফর্ম, যেখানে আপনি নিজেই কোন খবর বা ভিডিও পোস্ট করতে পারেন, আপনার সেই খবর বা ভিডিওটি হাজার হাজার মানুষ দেখবে, আপনার মাধ্যমে সবাই সেই ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারবে।
আমাদেরকে লেখা বা ভিডিও পাঠাতে "আপনিও হোন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক" পেইজ থেকে নিয়ম-কানুনগুলো ভালভাবে জেনে নিন।